রবিবার, ১৩ জুন, ২০১০

গ্রীষ্মের মজা

ক্যালেন্ডারের পাতানুযায়ী গ্রীষ্মকাল আসতে এখনো কয়েকদিন বাকি। এখন চৈত্র মাস, কিন্তু তারপরও কি গরমটাই না পড়েছে! গরমে সবারই কষ্ট হয়, তার উপর যদি না থাকে ইলেকট্রিসিটি- তা হলে তো কথাই নেই। ঘেমে-নেয়ে একেবারে ডালখিচুরি।

Kids-Around-the-World.jpgথাক, গরমের কষ্ট আর বর্ণনা করলাম না। তার থেকে চলো মজার ব্যাপারগুলো একটু মনে করিয়ে দেই। প্রথমেই আসে মজার মজার ফলের কথা। এই গরমের সময়ই পাওয়া যায় ফলের রাজা আম। তাও আবার সেকি বাহারি নামের, রসালো স্বাদের আম। উফ্‌, জিভে একেবারে পানিই এসে গেল। আরো আছে জাতীয় ফল কাঁঠাল, মুড়ি দিয়ে খেতে যার কোন তুলনা নেই। এরপর গোল গোল রসের লিচু।। আরো পাওয়া যায় জামরুল, তরমুজ, বেল ইত্যাদি ইত্যাদি
স্কুলগুলোতে এসময় দেয়া হয় লম্বা গরমের ছুটি। হোমওয়ার্ক নেই, স্যারের বকুনি নেই, দিব্যি খাটে উল্টো হয়ে শুয়ে কমিকস পড়া যায় নয়তো টিভিতে কার্টুন দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। গরমের ছুটি শেষ হলে মনে হয়, ইসস্, বন্ধটা যদি আর কটা দিন বেশি হতো!


এতো গেল আমাদের নিজেদের ব্যাপার-স্যাপার। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি গরম পড়ে। গরমের ব্যাপারটা আসলে নির্ভর করে সূর্য্যিমামার উপর। সে অন্য কথা, এখন তোমাদের যেটা বলতে চাই সেটা হলো অন্য দেশে তোমাদের মত ক্ষুদে বন্ধুরা গরমে কি করে।
প্রথমেই আসা যাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের কথায়। সেদেশে আবার গরম ধরা হয় একেবারে ক্যালেন্ডারের পাতা ধরে। সাধারনত মে মাসের প্রথম সোমবার থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার পর্যন্ত- এই সময়টা ধরা হয় গ্রীষ্মকাল। তবে যথাযথভাবে গরমটা থাকে জুন থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত।
soccer-kids.jpgএসময় সে দেশের শিশুরা যেটা বেশি করে সেটা হচ্ছে ক্যাম্পিং করা। ক্যাম্পিং করাটা খুব মজার। কিছুই না, একটা ব্যাগের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি নিয়ে পাহাড়ে নয়তো বনে চলে যাওয়া। অনেকটা পিকনিকের মতো, তবে এর মাধ্যমে বাচ্চাদের অনেক কিছু শেখানো হয়। কেউ যায় বাবা-মার সঙ্গে, কাউতে আবার নিয়ে যাওয়া হয় স্কুল থেকে।
গরমে প্রাণ বাচাঁনোর জন্য সবাই চায় একটু পানিতে গিয়ে দাপাদাপি করতে। আর মার্কিন মুল্লুকের দুই দিকে সমুদ্র হওয়ায় সবাই চলে যায় সমুদ্রের পানিতে একটা ডুব দিয়ে আসতে। একদিকে প্রশান্ত মহাসাগর, অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগর। তবে প্রাণ ঠাণ্ডা করতে অনেকেই বেছে নেয় আটলান্টিক মহাসাগরের তীর আর দ্বীপগুলো।
এসময় সেখানে ফুটবল খেলা খুব জমে উঠে। তাদের ফুটবল খেলাটা আবার একটু ভিন্ন ধরনের। তবে যাই হোক, খেলে মজা পেলেই হলো।
খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তাদের বাবা-মা সব সময়ই কড়া। এসময় তাদেরকে চর্বিযুক্ত ফাস্টফুডের বদলে বেশি বেশি সালাদ আর ফল খেতে দেয়া হয়।
শুধু এশিয়ার নয়, পুরো পৃথিবীর সবথেকে জনবহুল দেশ হচ্ছে চীন। এদেশটি আয়তনেও বেশ বড় হওয়ায় এর পুরো দেশে কখনো একই আবহাওয়া বিরাজ করে না। তবে সুবিধার জন্য গরমকালটা ধরা হয় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে চীনের সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় প্রায়ই বৃষ্টি হয়। গরম, তারসঙ্গে আবার যুক্ত হয় কাদা, বিরক্তিকরই বটে।
চীনের শিশুরা খুব ভদ্র-সদ্র। তারা স্কুল বন্ধ দেবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হোমওয়ার্কগুলো শেষ করে ফেলে। তারপর যারা শহরে থাকে, তারা চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। কেউ যায় বাবা-মার সঙ্গে নদীর তীরের শহরে ঘুরতে।
চীনারা সেই আদিকাল থেকেই সৃজনশীল। তাদের শিশুরাও এর ব্যাতিক্রম নয়। গরমের সময় তাই তারা আয়োজন করে নানারকম বিজ্ঞান মেলার। সবাই যার যার মতো কিছু একটা বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বানিয়ে সেটা মেলায় নিয়ে যায়, তারপর গর্বে বুক ফুলিয়ে সেটা সবার সামনে জাহির করে।

চীনারাও আমাদের দেশের মতোই ভাত খায়। তবে তাদের খাবার ধরনে একটু পার্থক্য আছে। তারা খায় দুইটা কাঠি দিয়ে। গরমের সময় তারা সবজি দিয়ে ভাত বেশি খায়। আর খায় চকোলেট।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গরমটা একটু চরমই থাকে। সেখানকার আবহাওয়ার ব্যাপারে আগে একটু বলে নেই।। এটা হয় মরুভূমির জন্য।
এই যেমন ধরা যাক কাতারের কথা। সেখানে এপ্রিল থেকে জুনের শুরুর ভাগ এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গরমটা একটু বেশি থাকে। একে তো গরম তার উপর আবার বালু, বাচ্চাদের খেলার জায়গা কই? তবুও তারা খেলে কিন্তু ঠিকই। ঘরের ভেতর খেলার পরিমাণটা একটু বেশি হলেও বাইরে তারা খেলে লুকোচুরি, ফুটবল এইসব। তবে তারা খেলতে খেলতে কখনোই বাসা থেকে খুব বেশি দূরে যায় না, গেলে যদি মরুভুমিতে হারিয়ে যায়? আর মরুভূমির যে বড় বড় ধুলিঝড় হয়, একবার তারমধ্যে পরলে- ওরে বাবা! দিনের বেলা সেখানে তাপমাত্রা অনেক থাকে, আবার রাতের বেলা রীতিমত শীত লাগা শুরু হয়
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, নাম নিশ্চই শুনেছ। ফুটবল খেলা দেখলে নাম তো অবশ্যই শুনেছ। সেখানে বনের পরিমাণ বেশি, তাই বৃষ্টিটা হয়ও বেশি। এ কারণে সেখানে গরমটাও থাকে মোটামুটি।
সারাবছরই বৃষ্টি হয়, তবে বছরের মাঝামাঝি বৃষ্টির হার একটু কমে যায় বলে উত্তাপটা বেড়ে যায়।
সেদেশের বাচ্চাদের প্রিয় খেলা ফুটবল। তারা সুযোগ পেলেই খেলে। এছাড়া তারা আরো কিছু খেলা খেলে, সেগুলো পুরোপুরিই তাদের স্থানীয় খেলা। তবে খেলাগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুটের বেশ মিল রয়েছে।

এবার আসা যাক ইউরোপের কথায়। জলবায়ুগত কারণে এ জায়গাটাতে শীত একটু বেশি থাকে। তাই জুলাই মাসে গ্রীষ্ম এলে সবাই বেশ ফুর্তি করে। বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়, পার্টি হয়। শিশুরা তাই বেশ মজা করে বাবা-মার সঙ্গে ঘুরাঘুরি করে। আমেরিকানদের মতো তারাও ক্যাম্পিং-এ যায়, সমুদ্র সৈকতে পানিতে হাবডুবু খেতে যায়।
kids_playing-anter.jpgউত্তর মেরুতে সব সময়ই থাকে বরফ আর বরফ। বরফের ফাঁকে গ্রীষ্মকাল ঢুকতেই পারে না। তাও মাঝেমধ্যে সেখানেও গরমকাল আসে। এমনিতে সেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাংকের নিচে ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। তবে জুন থেকে আগস্ট মাসে যখন সূর্য বেশি বেশি আলো দেয়, তখন তাপমাত্রা একটু বেড়ে হয় শূন্য ডিগ্রী। বোঝ অবস্থা, গরমকালেও তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রী, সেখানে গেলে তোমাকে পড়তে হবে পুরু জ্যাকেট- তাও একটা না, কয়েকটা।
বেচেঁ থাকাই যেখানে কঠিন সেখানে গরমকালে বাচ্চারা আর মজা করবে কিভাবে? তারপরও মজা যে একেবারে হয়না তা কিন্তু নয়। নদীর উপর বরফের আবরণ একটু পাতলা হলে অনেকেই সেখানে ফুটো করে মাছ ধরে। কেউ আবার কুকুরটানা গাড়িতে চড়ে ঘুরতে বের হয়।

অন্যদিকে দক্ষিণমেরুতে কখনোই গরমকাল আসে না, সেখানে কোন মানুষও থাকে না। মাঝে মাঝে দিনের বেলার দৈর্ঘ্য একটু বেশি হলে কম ঠাণ্ডা লাগে, গরমকাল বলতে শুধু এটুকুই।
এই হলো মোটামুটি বিশ্বের সব মহাদেশের শিশুদের গ্রীষ্মকালীন মজা করার কথা। তবে, আর সব শিশুর মতো তোমরাও তো জানো, শীত কিংবা গ্রীষ্ম- তোমাদের মজা করার ক্ষেত্রে এসব কোন বাধাই না

লেখাটি পুর্বে কিডজ.বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমে প্রকাশিত

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন