রবিবার, ১৩ জুন, ২০১০

এক বাক্‌স মজার ছবি

বাংলাদেশে ছোটদের জন্য খুব কম সিনেমাই তৈরি হয়েছে। তাই সিনেমা দেখার একমাত্র উৎস বাইরের দেশগুলোতে তৈরি সিনেমা, বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড বা অন্য কোন দেশের। কোনটা থেকে কার সিনেমা বেশি মজার এবং রেটিং-এ এগিয়ে, সেটা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-ঝাটি হয়ে থাকে, তাই একেবারে ঠিকঠাক মতো সিনেমাগুলোর রোল নাম্বার দেয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য। বিডিকিডজে তাই এবার বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে তোমাদের উপযোগী সিনেমার একটা তালিকা দেওয়া হলো।




হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন

HarryPotter18.jpgকী! হ্যারি পটার নামটা শুনেই সবাই উঠে বসলে? স্বাভাবিক, জে কে রাউলিং নামের এক ভদ্রমহিলা কী যে জাদুর গল্প ফেঁদে বসলেন, আর সবাই সেটা গিলে বসল। আর সেগুলো নিয়েই তৈরি হতে থাকলো একটার পর একটা সিনেমা। তারই প্রথমটার নাম ‘হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন’। বইয়ের পাতা থেকে একেবারে টিভির পর্দায় চলে আসে হ্যারি।

কী আছে হ্যারি পটারের মাঝে, যা কিনা নিমেষেই তাকে সবার বন্ধু করে দেয়? সেটা হলো হ্যারি খুব ভালো ছেলে। সে তার বন্ধুর জন্য সব করতে পারে। তাছাড়াও সে অনেক জাদু জানে, সে যে স্কুলে পড়ে সেটা একটা জাদুর স্কুল। সেখানে তার শিক্ষক থেকে শুরু করে বিল্ডিং-সিড়ি সব কিছুই জাদু দিয়ে তৈরি। তবে সবকিছু তো আর এত সহজ-সরল ভাবে হলে হবে না, হ্যারির সবচে বড় শত্রু হলো ভলডামোর্ট। হ্যারি যখন খুবই ছোট ছিল, সে তখন হ্যারির বাবা মাকে মেরেই ফেলে। সিরিজের এই পর্বে সে আবার অভিশাপ ভেঙ্গে ফিরে আসে, আর এসেই চায় হ্যারির সর্বনাশ করতে। বন্ধুদের নিয়ে বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে বেঁচে যায় হ্যারি। ছবিটি দেখতে বসলে শেষ না করে উঠতে পারবে না, সেটা কিন্তু আগেই বলে দিলাম। তাই ছবি দেখতে শুরু করার আগেই জরুরী কাজ আগেই সেরে নিও।

উইজার্ড অফ ওজ

WizardOfOZ18.jpg এটি ১৯৩৯ সালে তৈরি। সেই তখন থেকে এখনকার- ছেলে বুড়ো সবার কাছেই এই সিনেমাটি সমান জনপ্রিয়। এখনকার অ্যানিমেশন সিনেমার যুগে আদ্যিকালের তৈরি সিনেমাটি এখনও বেশ দাপটের সঙ্গেই টিকে আছে, কারণ সেটার কাহিনী, গান আর মজার মজার সংলাপ।

আজ থেকে একশ বছরেরও আগে এল ফ্রাংক বম নামের এক ভদ্রলোক একটি গল্প লেখেন, নাম ‘ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অফ ওজ’। লেখার পর এটা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেল। এই গল্প নিয়েই তৈরি হয় ‘উইজার্ড অফ ওজ’ সিনেমাটি।

ছোট্ট মেয়ে ডরোথি, তার কুকুর টোটো। তারা থাকে এক নির্জন গ্রামে। এক ঝড়ে তাদের ঘর উড়ে গিয়ে পড়ে নাম না জানা এক জাদুর শহরে। শুধু তাই নয়, ডরোথি পড়ে এক খারাপ ডাইনির খপ্পরে। ডাইনির হাত থেকে বাঁচার যখন কোন উপায় নেই, সে যখন পুরো দিশেহারা, তখনই কানে আসে ওজের চৌকশ জাদুকরের কথা। ডরোথি রওনা দেয় ওজ শহরের দিকে। পথে তার বন্ধু হয় বুদ্ধিহীন কাকতাড়ুয়া, হৃদয়বিহীন টিনের মানুষ আর ভীতু এক সিংহ। তারা মিলে ডাইনিকে মেরে ফেলে, আর ওজের জাদুকর ডরোথিকে পাঠিয়ে দেয় তার আগের শহরে।



অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড

AliceInWonderland18.jpg এটিও একটি গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা, তবে পুরোটাই কার্টুন এ্যানিমেশন। গল্পটি লেখা হয় ১৮৬৫ সালে। লেখেন লুইস ক্যারল। পরে গল্পটি নিয়ে অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সব মিলিয়ে ২৫টিরও বেশি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবে ডিজনি স্টুডিওর ১৯৫১ সালে নির্মিত কার্টুন এ্যানিমেশনটিই সবচে জনপ্রিয়।

গল্পের শুরুতেই দেখা যায় অ্যালিস ঘুমানোর আগে তার বড় বোনের কাছে গল্প শুনছে। হঠাৎ করেই অ্যালিস দেখতে পায় চশমা আর ঘড়ি পরা একটা খরগোশ দৌড়ে পালাচ্ছে। অ্যালিস তার পিছু নিলে সে দৌড়ে পালায়, তার পিছু পিছু সে চলে যায় একটা গর্তে, সেই গর্তে আছে জাদুর পানি আর বিস্কুট, যা খেলে একেবারে লিলিপুট হয়ে যাওয়া যায়, আবার বিশাল আকারও ধারণ করা যায়।

গর্তের ভেতর ঢুকেই অ্যালিস দেখে সে চলে এসেছে অন্য রাজ্যে। সেখানে সবার বিচিত্র চেহারা- কিম্ভুত নাম একেকটার। তাদের সঙ্গে গান গেয়ে নাচানাচি করে পরে অ্যালিস ফিরে আসে নিজের রাজ্যে, কিন্তু সে বুঝতে পারে না এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব।

ফাইন্ডিং নিমো (২০০৩)

FindingNemo18.jpg ছোট নিমোর মা নেই, বাবাই তার সব। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে একটা মানুষ কিডন্যাপ করে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। বিক্রি করে দেয় শুনে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ নিমো হলো একটা মাছ। সে থাকতো সাগরে তার বাবার সঙ্গে। বাবা তাকে সবসময় আগলে রাখলেও স্কুলের প্রথমদিনেই নিমো চুরি হয়ে যায়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অনেক দূরে।

তার বাবা মারলিন তো বেশ ভীতু, সাগরের কিছুই চিনে না। তাও সে তার একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে জীবনের ঝুকি নিয়ে রওনা দেয় অথৈ সমুদ্রে। তার সঙ্গী হয় আরেকটি মাছ, যে কিনা ১০ সেকেন্ড আগের কথাই ভুলে যায়। মাংসখেকো হাঙ্গর, দীর্ঘজীবি কচ্ছপ, হাবাগোবা কাঁকড়া- সবকিছু পেরিয়ে তারপর সে পায় তার ছেলের দেখা। কিন্তু এক দুষ্টু মেয়ে নিমোকে তার বাসায় নিয়ে যেতে চায়, মেয়েটার সমস্যা একটাই, সে মাছ ধরে এমন জোরে ঝাঁকায় যে মাছ বেচারা পুরো অক্কা। নিমোর বাবা তখন এক পাখির সাহায্যে নিমোকে উদ্ধার করে। টান টান উত্তেজনায় ভরপুর এই ছবিটি দেখলে ভুলতে পারবে না কোনদিন।



টয় স্টোরি (১৯৯৫)

Toy_Story18.jpg নাম শুনেই বুঝতে পারছো এটা হচ্ছে খেলনাদের খবরাখবর। খেলনাগুলোর মালিকের নাম অ্যান্ডি। যদিও সে জানে না তার অনুপস্থিতিতে তার পুতুলগুলো হাঁটাহাটি করে, কথা বলে, গান গায় আবার একটু নেচেও নেয়।

পুতুলদের নেতা হচ্ছে কাউবয় পুতুল উডি। তার জীবন বেশ ভালোই চলছিল, হঠাৎ অ্যান্ডির জন্মদিনে উপহার হিসেবে আসে মহাকাশের যোদ্ধা বাজ লাইটইয়ার, ভাব দেখে মনে হয় সে নিজেকে মহা পাওয়ারফুল ভাবে এবং সেইসঙ্গে নিজেকে পুতুলদের সর্দার মনে করে। তখনই তার সঙ্গে উডির ঝগড়া লাগে। মারামারির এক পর্যায়ে তারা ছিটকে চলে যায় বাসা থেকে অনেক দূরে। এরপর পরে বিপদে, বিপদ মানে মহা বিপদ। এক দুষ্ট ছেলে পুতুল মোটেই পছন্দ করে না, সে সুযোগ পেলেই পুতুল ধরে টুকরো টুকরো করে ফেলে। অনেক বুদ্ধি করে উডি আর বাজ লাইটইয়ার সেখান থেকে পালায়। এরপর এক পাগলা কুকুর তাদের তাড়া করে। তখন তারা আবিষ্কার করে, শত্রুতা নয়- বন্ধু হলেই বরং লাভ বেশি।

এই যে তাদের এত্ত এ্যাডভেঞ্চার, বেচারা অ্যান্ডি সেগুলোর কিছূই টের পায় না। সে শুধু মন খারাপ করে বসে থাকে আর ভাবে -আহারে, আমার পুতুলগুলো গেল কই?

দি ইনক্রেডিবলস

The_Incredibles18.jpg এই সিনেমাটিও বেশ মজার। পুরো সিনেমাতে সুপারহিরোদের লাফ-ঝাঁপ, তাদের শক্তি পরীক্ষার লড়াই। প্রথমে দেখার হয় সুপার হিরো মি. ইনক্রেডিবল আর তার স্ত্রী প্লাস্টিক উইমেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন' এরপরই সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখান শুরু করে। সুপারহিরোরা যখন পিটাপিটি করে, তখন তো একটু ভাঙচুর হতেই পারে- কিন্তু মানুষগুলো তাতেই আপত্তি করে। তারা চায় শান্তিপূর্ণ জীবন, দরকার নেই তাদের সুপারহিরোদের।

মনের দুঃখে মিস্টার ইনক্রেডিবল আর প্লাস্টিক উইমেন মানুষের উপকার শিকেয় তুলে দিয়ে ঘর-সংসার শুরু করে। তারপর ১৫ বছরে তাদের মোট ৩টি বাচ্চা হয়। বাবা-মা সুপারহিরো হলে বাচ্চা-কাচ্চারা কি আর ঠিক থাকে! তাদের শরীরেও সুপার পাওয়ার চলে আসে। তেমনি তাদের বড় মেয়েটি পারে অদৃশ্য হয়ে যেতে, বড় ছেলেটি এত জোরে দৌড়তে পারে য়ে, টিচার তাকে ধরে শাস্তি দিতে চাইলেও পারে না। কারণ ততক্ষণে সে এক দৌড়ে পগারপার। আর তাদের একদম ছোট পিচ্চি ভাইটার তো অদ্ভুত শক্তি, সে আগুন-লোহা-বরফ-মাটি, চাইলে যে কোন কিছু হয়ে যতে পারে।

এভাবেই যখন তাদের সুখের সংসার চলছিল, তখন বাবা পড়ে বিপদে। তার পুরনো শত্রু তাকে কৌশলে আটকে ফেলে। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মাও ধরা পরে। কি আর করা, এবার বাচ্চা দুটোই এগিয়ে আসে। এরপর তারা দুজনে মিলে যা কান্ডটাই না করল, গুন্ডাগুলো তো পালাবার জায়গাই পেল না। এদিকে তিনজনের দুজন তো বাবা-মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে, কিন্তু একদম ছোটটা কি করলো? সে করেছে আরো বড় কাজ, একেবারে পালের গোদা আসল ভিলেনটাকেই সে ধরিয়ে দেয়। ধরে তো ধরে, এমন ভাবে তাকে প্যাঁচে ফেলে দেয় যে, বেচারা পালাতে গিয়ে শেষে অক্কাই পায়।



ই.টি- দি এক্সট্রা টেরিস্টেরিয়াল (১৯৮২)

ET18 এটি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উপর নির্মিত স্টিভেন স্পিলবার্গের একটি সাড়া-জাগানো সিনেমা। সিনেমাটি ছোটদের উপযোগী করে তৈরি করা হলেও সে সময় এটি ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।

এবার সিনেমার কাহিনীটা একটু বলি। ইলিয়ট খুব ভালো একটা ছেলে। সমস্যা একটাই- তার সঙ্গে কেউ মেশে না। এদিকে এমনই সময়ে একদল মহাকাশের প্রাণী পৃথিবীতে এসে খুব পড়ালেখা করছিল- মানে গবেষণা করছিল আর কি। হঠাৎ কিছু মানুষ তাদের বন্দুক- লাঠিসমেত ধাওয়া দেয়। তারা তাড়াতাড়ি মহাকাশযানে করে পৃথিবী থেকে কেটে পড়ে। কিন্তু সবচে ছোটটাকে ভুলে পৃথিবীতে রেখে যায়। বেচারা যখন টের পায়, তাকে এই পৃথিবীতে একা ফেলে সবাই চলে গেছে, বেচারার মুখ শুকিয়ে আমসি!

ঘটনাক্রমে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ইলিয়টের। ইলিয়ট প্রথমে প্রাণীটার চেহারা দেখে ঘাবড়ে গেলেও পরে ঠিকই খাতির করে ফেলে। কিন্তু সে তার ভাই-বোন ছাড়া আর কাউকে একথা জানায় না, কেননা তাহলে পাঁচ কান হয়ে সবখানে একথা ছড়িয়ে যাবে আর মহাকাশের প্রাণীটা পড়বে বিপদে। তারপর তারা প্রানটার নাম দেয় ই.টি.। ইটি হয়ে যায় তাদের খেলার সঙ্গী। ইটির অনেক ক্ষমতা, সে যে কারো ব্যথা দুর করতে পারে, আকাশে উড়তে পারে, অন্যকেও উড়াতে পারে।

এরপরের কাহিনী সংক্ষেপে বললে যেটা দাঁড়ায় তা হলো- ইটি বিপদে পড়ে তারপর বিপদ থেকে উদ্ধারও পায়। একসময় তার বাবা-মা আসে আর ইটি তাদের হাত ধরে চলে যায়। আসলে তাড়াতাড়ি এভাবে বলে সিনেমাটার মজা বোঝা যাবে না, বুঝতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে।

শ্রেক (২০০১)

Shrek18.jpg এটিও আরেকটি ছোট-বড় সবার প্রিয় সিনেমা। এই সিনেমাই হচ্ছে সর্বপ্রথম অ্যানিমেশন সিনেমা, যা কিনা অস্কার পায়। কী আছে এই সিনেমায়, যা কিনা সব বয়সের মানুষের মন জয় করেছে, আবার পুরষ্কারও পেয়েছে?

শ্রেকের বসবাস রূপকথার রাজ্যে। সেখানে হেসেখেলে বেড়ায় সেইসব আজব প্রাণীরা, যাদের আমরা এতদিন রূপকথার বই-তে দেখে এসেছি। তো একদিন সেই রাজ্যের রাজা ঘোষণা দিলেন, আর নয় ওসব বিদঘুটে প্রাণী, মেরে ফেল ওদের, তাড়িয়ে দাও রাজ্য থেকে।

তখন শ্রেক খুব হম্বিতম্বি করে। করবেই তো, কারণ সে হচ্ছে একটা দৈত্য। হিসাব অনুযায়ী তাকেও রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তখন শ্রেক রাজার সঙ্গে দেখা করে তার প্রতিবাদ জানায়। বদ রাজা তখন একটা ফন্দি আটে, শ্রেক যদি ঘুমন্ত রাজকন্যাকে নিয়ে আসতে পারে, তবেই শ্রেককে আর তাড়ানো হবে না।

বাধ্য হয়ে শ্রেক রওনা দেয় অজানার উদ্দেশ্যে। তার সঙ্গী হয় একটা বাচাল গাধা। তারা দুজনে মিলে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে। এদিকে রাজকন্যা ফিয়না শ্রেককে মনে মনে ভালবাসে, সে চায় না ওই বাটুল বদমাশ রাজাকে বিয়ে করতে। শুরু হয় মনোমালিন্য। ওদিকে গোঁদের উপর বিষফোড়ার মত রাজকন্যাকে ছোটকালে এক ডাইনি অভিশাপ দিয়েছিল- ফিয়না সুন্দরী হলেও রাতের বেলা সে হয়ে যাবে একটা দৈত্য, ঠিক শ্রেকের মত।

এদিকে বদমাশ রাজা, অন্যদিকে অভিশাপ, সব মিলিয়ে শ্রেকের অবস্থা কাহিল। তখন তারপাশে এসে দাড়ায় বাচাল গাধা আর তার অন্য বন্ধুরা। তাদের নিয়ে শ্রেক রাজকন্যাকে রাজার কবল থেকে বাঁচায়। এরপর তারা বিয়ে করে সুখে-শান্তিতে ঘর-সংসার শুরু করে।

পরবর্তীতে অবশ্য শ্রেক সিরিজের আরো দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেগুলো হল- শ্রেক-২ (২০০৪) এবং শ্রেক দি থার্ড (২০০৭)। এ দুটি সিনেমাও বেশ দর্শকনন্দিত হয়েছে।


হু ফার্মড রজার র‌্যাবিট (১৯৮৮)

RigerRabbit18.jpg ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি তৈরি করতে ৭৮ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল, যা তখনকার পর্যন্ত রেকর্ড। এত খরচ হবার পেছনে কারণ হলো সিনেমাটিতে বাস্তব এবং কার্টুন- দুটো একসঙ্গে আছে। ‘রজার র‌্যাবিট’ হচ্ছে একটা খরগোশের নাম। কথা-টথা বলতে পারে। এই চরিত্রটি পুরোটাই কার্টুন অ্যানিমেশনের মাধ্যমে করা।

রজার র‌্যাবিট টুনসিটিতে থাকে। সেখানে এক ভিআইপি হোমরা-চোমরা লোক খুন হয়, সব সাক্ষী-প্রমাণ যায় রজারের বিপক্ষে। কিন্তু বেচারা আসলেই খুন করেনি। সে কিছুই জানে না এই ব্যাপারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, রজারের নামে জারি হলো পরোয়ানা।

এহেন বিপদ থেকে রজারকে বাঁচাতে পারেন কেবল একজন, তিনি একজন রাগী গোয়েন্দা। রজারকে তিনিই কেবল নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনি রজারকে দুচোখে দেখতে পারেন না। শুধু রজারকে কেন, তিনি কোন কার্টুন চরিত্রই সহ্য করতে পারেন না।

গোয়েন্দাকে রাজি করাতে রজারের নানান মজার কাণ্ডকীর্তি করতে হয়। এভাবেই ঘটনা এগিয়ে চলে। সিনেমাটি তৎকালীন সময়ে ব্যাপক ব্যবসা সফল হয় এবং বেশ সারা ফেলে দেয়।

লায়ন কিং (১৯৯৪)

ডিজনীর আরেকটি অসাধারণ কার্টুন অ্যানিমেশন হচ্ছে ‘লায়ন কিং’। এর পুরো কাহিনীটাই ঘটে আফ্রিকার তৃণভূমি অঞ্চলে। সেখানকার রাজা হচ্ছে এক সিংহ, নাম মুফাসা। তার বউ হচ্ছে সারাবি আর ছেলে সিমবা। মুফাসার ভাই হচ্ছে স্কার, সে হচ্ছে বদের বদ। সে সবসময় জঙ্গলের রাজা হতে চায়।

মুফাসাকে একসময় স্কার মেরেই ফেলে। কিন্তু দোষ দেয় ছোট্ট সিমবার। মনের দুঃখে সিমবা অনেক দুরে চলে যায়। ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় যখন তার অবস্থা মরোমরো, তখন তার পাশে এসে দাড়ায় তিমন আর পুমবা। তিমন হচ্ছে বেজি, আর পুমবা হচ্ছে একটা শুকর। তারা হয়ে উঠে সিমবার ভালো বন্ধু।

ধীরে ধীরে সিমবা বড় হয়ে পরিণত হয় বিশাল এক সিংহে। সে তখন তার চাচা স্কারের সব কথা জানতে পারে। বদমাশ স্কারের বিরুদ্ধে সে রুখে দাড়ায়। অনেক ঘটনা দুর্ঘটনার পর শেষমেষ তার জয় হয়।

সিরিজ হিসেবে লায়ন কিং-এর পরে আরো সিনেমা এসেছে। সেগুলো হচ্ছে লায়ন কিং: ‘সিমবা’স প্রাইড’ এবং ‘লায়ন কিং: ওয়ান এন্ড হাফ’।



তারে জমিন পার (২০০৭)

আকাশ ভরা তারা, সেই তারাই নেমে আসে পৃথিবীতে। এই সিনেমাটিতে কিন্তু সত্যি সত্যি আকাশের তারা নেমে আসা দেখানো হয় না, বরং বোঝানো হয়েছে- আমাদের শিশুদের প্রতিভা ঠিকমতো বিকশিত হতে দিলে একসময় তারাই এই মাটির পৃথিবীতে তারার মতো মিটমিট করে জ্বলতে পারে। গল্পের মুল চরিত্র ইশান (দার্শিল সাফারি), আট বছরের এক ছেলে- যে পড়ালখার থেকে পছন্দ করে ঘুরে বেড়াতে. আশপাশের পরিবেশ দেখতে।

ইশান হচ্ছে তার শিক্ষকের ভাষায় এক মহা দুষ্ট ছেলে। সে পড়ালেখায় মোটেই ভালো নয়, সব বিষয়ে ডাব্বা মারে। তার বাবা-মা যখন তার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিল। তাকে ভর্তি করে দেয়া হলো অনেক দুরের এক স্কুলে। সেখানে তাকে এক হোস্টেলে থেকে সম্পূর্ণ অচেনা ছেলেদের সঙ্গে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে।

অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে থেকে ইশান পড়ে গেল বেশ ফাঁপড়ে। এসময় তাদের স্কুলে এল নিকুম্ব স্যার (আমির খান)। তিনি এসে সব ছাত্রের বন্ধু হয়ে গেলেন। সবাই তার কাছ থেকে খেলার পাশাপাশি পড়ার কাজটাও শিখে নিতে লাগলো। একমাত্র ব্যাতিক্রম হচ্ছে ইশান।

নিকুম্ব স্যার তখন ইশানের মূল সমস্যা খুঁজে বের করলেন। ইশান আসলে মনে করে বই-এর পাতায় ছাপার অক্ষরগুলো আসলে এক একটা দানব, যেগুলো তাকে সুযোগ পেলেই ধাওয়া করবে। স্যার তখন তার ভুল ভাঙ্গালেন। তিনি আরো টের পেলেন, ইশান ভালো ছবি আঁকতে পারে। তখন তিনি স্কুলে একটি ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। ইশান সেখানে সবাইকে অবাক করে দিয়ে পেল প্রথম পুরষ্কার। ইশানের বাবা-মা সবাই তখন তাদের ভুল বুঝতে পারেন, তারা ইশানকে কাছে টেনে নেন। বলিউডের ব্যতিক্রমধর্মী এই ছবিটি দেখে তোমাদের মজা লাগবেই।

দীপু নাম্বার টু

দীপুর আব্বু একজন সরকারী চাকরিজীবি, বদলির চাকরি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। বাবার সাথে সাথে দীপুরও নানান জায়গায় ঘুরতে হয়। সেই সুবাদেই একটা নতুন স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয় দীপু। সে নতুন স্কুলে প্রথম দিন ক্লাস করতে গিয়ে দেখে সেখানে আরেকটি ছেলের নাম দীপু। তাই নতুন দীপুকে চেনার সুবিধার জন্য তার নাম হয়ে যায় দীপু নাম্বার টু।
নতুন দীপু দুষ্ট আর বুদ্ধিমান ছেলে। তাদেরই ক্লাসে বুলি নামে একটা ছেলে ছিলো। ছেলেটি সবার সাথেই অকারণে মারামারি করতো আর সবাইকে খুব বিরক্ত করতো। কেউ যদি সেটার প্রতিবাদ করতে যেত, তাহলে তার অবস্থা হতো আরও খারাপ। স্যারেরা পর্যন্ত বুলিকে সমঝে চলতো। স্বাভাবিকভাবেই নতুন ছেলে হিসেবে দীপুর উপরও সে আক্রমণ করলো। দীপুও খুব সোজা ছেলে নয়, সে এর উপযুক্ত জবাব দিলো। ব্যস্‌ তাদের দু’জনের মধ্যে বেশ লেগে গেল। এরপর দীপু আর বুলি কেউ কাউকে সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু অবাক কাণ্ড, সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা একদিন বন্ধু হয়ে গেল।

এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। ওদের দু’জনের ভেতর ঘটে গেল অনেকগুলো ঘটনা। দীপুকে দেখে সে বুঝলো সে এতদিন ভুল কাজ করে এসেছে। তাই সে ভাল হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো এবং ভাল হয়ে গেল। এর পর থেকে দীপু আর বুলি হয়ে গেল একদম জানের বন্ধু। এরই মধ্যে নানাভাবে ঘুরতে ঘুরতে তারা একটি ডাকাত দলের সন্ধান পেল। এদের কাজকর্ম দেখে দীপু আর বুলি সিদ্ধান্ত নিলো, তারা এর একটা বিহিত করবে। বেশ সংঘবদ্ধ এ দলটির বিরুদ্ধে তারা দু’জন মিলেই এগিয়ে গেল।

কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তারা কি পেরেছিলো সেই দলটাকে ধরিয়ে দিতে? এটা যদি জানতেই চাও, তাহলে তাড়াতাড়ি দেখে ফেল মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে পরিচালিত এই ছবিটি। আশা করি, ছবিটি তোমাদের ভাল লাগবে।


হীরক রাজার দেশে (১৯৮০)

Hirak_Rajar_Deshe18.jpg এই মজার সিনেমাটি বানিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। গুপী বাইন বাঘা বাইন হচ্ছে তার তৈরি দুটি মজার চরিত্র। এদের নিয়ে তিনি প্রথমে বানান ‘গুপী বাইন বাঘা বাইন’ নামের চলচ্চিত্রটি। তারপর সেটার সাফল্যে তৈরি করেন হীরক রাজার দেশে।

সিনেমাটির শুর তেই দেখা যায় গুপী আর বাঘা দুজনেই সুধী রাজার মেয়ের জামাই। বেশ আরাম আয়েশে কাটছে তাদের দিন। কিন্তু একসময় তাদের নিজেদের জীবনের উপরে একপ্রকার বিরক্তি এসে গেল। কত আর বসে বসে খেতে ভালো লাগে! তাই তারা বেরিয়ে পড়লো ঘর ছেড়ে। এরপরে হাঁটা দিল হীরক রাজ্যের উদ্দেশ্যে। কারণ সেখানে চলছে গানের কম্পিটিশন। তারা দুজনে আবার ভালো গান-বাজনা করতে পারে কিনা!

হীরক রাজ্যটা বেশ অদ্ভুত, সেখানে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি, যেখান থেকে পাওয়া যায় অনেক হীরে। কিন্তু হলে কি হবে, সে দেশের মানুষ খুব গরিব। কেননা তাদের পাওয়া সব হীরে দুষ্ট রাজা নিজেই নিয়ে নেয়। ফলে মানুষজনের দুঃখের শেষ নেই।

রাজাটা মহা পাজী। সে তার রাজ্যে পড়ালেখা একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয়। বলে, ‘জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।’ তখন গুপী বাইন বাঘা বাইন তখন সেখানকার এক শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে বিদ্রোহ করে রাজাকে তার সিংহাসন থেকে ফেলে দেয়। হীরক রাজ্যে আবার সুখ-সমৃদ্ধি ফিরে আসে।

আরও আছে...

এইগুলোই সব নয়। এছাড়াও আরো অনেক ভালো-মজার সিনেমা আছে। যেমন ‘বিউটি অ্যান্ড দি বিস্ট’, ‘আয়রন জায়ান্ট’, ‘আইস এজ’, ‘লিটল মারমেইড’, ‘স্নো হোয়াইট’, ‘সিনডারেলা’, ‘বাগস লাইফ’ আরো কত বলব। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও তৈরি হয়েছে তোমাদের পছন্দসই আরো অনেক মুভি। এই যেমন গনেশা, হনুমান, ঘটোৎকচ প্রভৃতি অ্যানিমেশন। এছাড়াও আছে সাম্প্রতিক সময়ের কৃষ, ভূতনাথ প্রভৃতি।

আমাদের দেশে তোমাদের উপযোগী খুব বেশি সিনেমা তৈরি হয়নি। তবে যা হয়েছে তার মধ্যে দেখার মতো আছে বেশ কটি। যেমন: এমিলের গোয়েন্দাবাহিনী, দীপু নাম্বার টু, দুরত্ব ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলা ভাষায় নির্মিত ছোটদের আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা - গুপী গাইন বাঘা বাইন, গুপী বাঘা ফিরে এলো, হীরক রাজার দেশে, সবুজ দ্বীপের রাজা, সোনার কেল্লা প্রভৃতি।

যদি এসব লিস্টিতে তোমার কোন প্রিয় সিনেমা বাদ পড়ে যায়, তাহলে মন খারাপ করো না। তাড়াতাড়ি বসে পড়, লিখে পাঠাও বিডিকিডজের ঠিকানায়।

আরো জানাতে পারো কোন সিনেমা তোমার ভালো লাগে, কোনটা ভালো লাগে না। এছাড়া তোমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় সিনেমা সম্পর্কে লিখে আমাদের জানাতে পারো। কথা দিচ্ছি, লেখা ভালো হলে বিডিকিডজের পাতায় সেটা ছাপা হবে। তাহলে আর দেরি না করে সিনেমাগুলো দেখে ফেলো আর তারপর বসে যাও কাগজ কলম নিয়ে।

লেখাটি পুর্বে কিডজ.বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমে প্রকাশিত

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন